 |
জোয়ার ভাটার ব্যবধান ও জোয়ার ভাটার ফলাফল আলোচনা |
★ জোয়ারভাটার ব্যবধান :-
পৃথিবী তার মেরুরেখাকে বেষ্টন করে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডেএকবার আবর্তন করে। চন্দ্রের পরিক্রমণ গতি না থাকলে অর্থাৎ চন্দ্র স্থির থাকলে পৃথিবী-পৃষ্ঠের একটি নির্দিষ্ট স্থানে একই নির্দিষ্ট সময়ে মুখ্য জোয়ার সংঘটিত হত। কিন্তু চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগায় ২৭⅓ দিন। অর্থাৎ প্রতিদিনে (৩৬০° : ২৭⅓ দিন) ১৩° ১০'১৪.৬৩" কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করে। ফলে একদিনে ঐ নির্দিষ্ট স্থান থেকে (১৩°১০'১৪.৬৩" = ১৩.১৭০৭৩ X ৪ মি) ৫২ মি ৪১ সেকেন্ড পথ অতিক্রম করে। সেই কারণে পৃথিবীর কোনাে স্থানে মুখ্য জোয়ার সংঘটিত হওয়ার (২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড + ৫২ মিনিট ৪১ সেকেন্ড) ২৪ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ড পরে আবার ওই নির্দিষ্ট স্থানে মুখ্য জোয়ার সংঘটিত হবে। মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের পার্থক্য হবে ১২ ঘন্টা ২৪ মিনিট ৪৪.৫সেকেন্ড। একটি জোয়ার ও একটি ভাটার জন্য পর্যায়ক্রমে ৬ ঘণ্টা ১২ মিনিট ২২.২৫ সেকেন্ড সময়ের ব্যবধান হবে।
০ বান কাকে বলে (Tidal bore) :-
ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল নদীর মােহানা দিয়ে নদী প্রবাহের বিপরীত দিকে নদীখাতের মধ্য দিয়ে প্রবল জলােচ্ছাস ঘটিয়ে প্রবেশ করে। একেই বান ডাকা, বলে। বর্ষাকালে এর তীব্রতা অধিক হয়। বর্ষাকালে হুগলি নদীতে এমনিতেই জল প্রবাহ বেশি থাকে। আবার ওই ঋতুতে বিশেষ সময়ে ভরা কোটালের সময় জলস্ফীতির মাত্রা এত অধিক হয় যে ওই অবস্থাকে দুটি প্রাপ্তবয়স্ক ষাঁড়ের যুদ্ধকালীন অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হয় বলে ভরা জোয়ারের এই অবস্থাকে ষাঁড়াবাড়ির বান বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদী, ইংল্যান্ডের টেমস নদী, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী ও চিনের ইয়াং-সি-কিয়াং প্রভৃতি নদীতে বান ডাকে।
০ নদীতে বান আসার কারণ :-
(১) নদী মােহানা ফানেল আকৃতির অর্থাৎ চওড়া হলে এবং
নদীখাত সংকীর্ণ হলে,
(২) নদী মােহানায় বালির চড়া থাকলে, (৩) নদীতে সারাবছর জল থাকলে ও
(৪) প্রবল জলস্রোত থাকলে নদীতে বান আসে।
★ জোয়ারভাটার ফলাফল (Tidal Result) :-
(1) জোয়ারের ফলে অগভীর নদীগুলির জলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওই সময় নৌ-চলাচলের সুবিধা হয়।
(2) ভাটার টানে নদীর আবর্জনা ও পলি মুক্ত হয়। ফলে নদীখাতের গভীরতা ও বিস্তার বৃদ্ধি পায় এবং নাব্যতা রক্ষা পায়।
(3) শীতপ্রধান অঞ্চলে অতিরিক্ত ঠাণ্ডাতেও জোয়ারের লবণাক্ত জল নদীগুলিকে বরফমুক্ত রাখে ও জলপ্রবাহ বজায় রাখে।
(4) জোয়ার-ভাটায় নদীতে সামুদ্রিক মাছের আনাগােনা জেলেদের জীবনযাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভাটার টানে নৌকা ছাড়া এবং জোয়ারের সময় বাড়িফেরা – মৎস্যজীবীদের জীবনের এক ছন্দময় কালক্ষেপ।
(5) জোয়ারভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
(6) জোয়ারের ফলে নদীর স্বাদুজলে লবণের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে তা পানের ও সেচকার্যের অযােগ্য হয়ে ওঠে।
(7) জোয়ারে প্রবল বেগে নৌকা, লঞ্চ, ও ছােটো জাহাজের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রবল জোয়ারের সময় নদী পাড়ের ও সমুদ্র উপকূলভাগের কৃষিজমি ও ঘরবাড়ির ভীষণ ক্ষতি হয়।
(8) অনেক সময় জোয়ারের প্রাবল্যে মােহানার পলিরাশি দেশের অভ্যন্তরে নদীগর্ভে সঞ্চিত হয়ে নদীর গভীরতা কমায় ও নাব্যতায় বিঘ্ন ঘটায়।
0 Comments